ছাত্রজীবন থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন শাহেদ এজাজ আহমেদ ( রাজন )। চাঁদপুরের ছেলে রাজন বুয়েটে ভর্তি হন ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য। কিন্তু উদ্যোক্তা হবার প্রবল ইচ্ছা থাকায় বুয়েটে যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়াকালিন সময়েই ছোট ছোট কিছু উদ্যোগ নেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হতে হয়। কিন্তু এর মধ্যেও তিনি কিছু অসাধারন জ্ঞান অর্জন করেন। উদ্যোক্তা হবার জন্য তিনি অংশ নেন উদ্যোক্তা তৈরির বিভিন্ন সেমিনারে, এছাড়াও সফলদের সফলতার পিছনের গল্প শুনে শুনে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে থাকেন রাজন। তত দিনে রাজন বুঝে নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নির্দিস্ট সিলেবাসে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজের কর্মক্ষেত্র নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে।
তার সাথের সহপাঠীরা যখন নানা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করছে আবার কেউবা উচ্চ ডিগ্রী লাভের আশায় বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে তখন রাজন নিজ উদ্যোগে কজ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন।
২০১৭ সালের শেষ দিকে একটা জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় মাসুদুর খান নামের একজন উদ্যোক্তার খোঁজ পেলেন। তিনিও ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের! মাসুদুর খান দেশে ছোটবড় কিছু উদ্যোগ এবং পেট্রোবাংলায় চাকরি চুকিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। বিদেশে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাক্স (আর্লিংটন) থেকে এম এস, এম বি এ করে, টয়োটা, জেনারেল মোটরসের মত বাঘা বাঘা কোম্পানিতে লোভনীয় বেতনে চাকরি করেও সন্তুষ্ট না হয়ে নিজ উদ্যোগে “হোটেল ইন্ডাস্ট্রি” দিয়ে শুরু করলেন এবং প্রচন্ড পরিশ্রম, একাগ্রতায় বিদেশের মাটিতে প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে ১৪ টি হোটেলের মালিক হয়ে যান।
তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজন তার খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলেন। তার সাথে যোগাযোগের পর জানতে পারলেন এই বাংলাদেশেও তার ইনভেস্ট করার ইচ্ছা আছে কিন্তু সঠিক আর নির্ভরযোগ্য পার্টনারের অভাবে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। রাজন এই সুযজ্ঞে নিজের উদ্যোগী ভাবনা কে কাজে লাগিয়ে দেশি এবং বিদেশী কয়েকজন বিনিয়োগকারীকে নিয়ে দুজন একসাথে “লাইফ স্টাইল হোটেল বিডি লিমিটেড” নামে একটি ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর হোটেল ট্রপিক্যাল ডেইজির ব্যাবস্থাপনার কাজে নেমে পড়েন।
শুরুতেই বুটিক কনসেপ্টে আমরা হোটেলের রেনোভেশনের কাজে মনোযোগ দেন। হোটেলের লবি, রুম, রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স হল,রুফটপ লাউঞ্জ ডিজাইনে দেশিয় সংস্কৃতি-ঐতিজ্য এবং লোকাল ম্যাটেরিয়ালকে প্রাধান্যদিয়ে চমৎকার ভাবে রেনোভেশন করে নতুন রুপে হোটেল ট্রপিক্যাল ডেইজি রাজনের হাত ধরে পথচলা শুরু করে।
রেনোভেশনের পাশাপাশি রাজন হোটেলের স্টাফ এবং নিজের ট্রেনিং পর্বটি ও সেরে ফেলেন। ম্যানেজম্যান্টে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, কাস্টমাইজড গেস্ট সার্ভিস,ক্যাটারিং সার্ভিস,ইভেন্ট স্পেস,রেস্টুরেন্ট সার্ভিস, গেস্ট সার্ভিসে জিরো টলারেন্স নীতি, টিমের প্রতিটি সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমের সুফল আসা শুরু হল এক এক করে।
রাজন শুধু মাত্র নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে থেকে থাকেননি দিন দিন বাড়িয়ে চলেছেন কর্মসংস্থানও। মাত্র ২২ জন নিয়ে শুরু করি, স্বল্পসময়ে এখন তাদের কর্মি সংখ্যা ৩৪ এ এসে পৌঁছায়।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ট্রাভেল এন্ড হস্পিটালিটি এওয়ার্ড থেকে আমাদের হোটেল ট্রপিক্যাল ডেইজিকে কাস্টমার রিভিউ এবং ডিজাইনের উপর ভিত্তিকরে “বেস্ট বুটিক হোটেল অফ দ্যা ইয়ার-২০১৯” ঘোষণা করে।
শাহেদ এজাজ আহমেদ ( রাজন ) স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের বড় বড় সব বিভাগীয় শহর এবং ট্যুরিস্ট জোনে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সেবা দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বে একদিন নামকরা চেইন হোটেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
শাহেদ এজাজ আহমেদ ( রাজন ) এর এই অসাধারন ও সাহসী উদ্যোগের জন্য ‘চাকরি খুজব না, চাকরি দেবো’ গ্রুপ থেকে দেয়া হয় ‘নবীন উদ্যোক্তা স্মারক ২০১৮’