উচ্চশিক্ষা শেষ করা চার তরুণীর (সাদেকা বেগম, আফিয়া আক্তার, হোসনে আরা বেগম, শারমীন আক্তার) প্রত্যেকের জীবন সংগ্রাম ও উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প আজ অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে তাদের স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ও সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠা। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতা, পরিবাবের প্রধান উপার্জনকারীর শারীরিক অসুস্থতা ও সামাজিক কুসংস্কার তাদের স্বপ্ন বাস্তয়নের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়। যখন আত্মীয়স্বজন ও সামাজিক চাপে তাদের অল্প বয়সে বিয়ের জন্য চাপাচাপি করা হচ্ছিলো তখনই ওরা বুঝতে পেরেছিল তাদের নিজেদেরকেই একটা ঝুঁকি নিয়ে নতুন কিছু করার পথ বের করতে হবে।
শত অভাব অনটনের মাঝেও তাদের স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছাকে সমর্থন দিয়েছিলো তাদের মাতা-পিতা। পরিবারকে বুঝিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে থেকে ওরা চার তরুণী চলে আসে জাদুর শহর ঢাকাতে। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে অল্প বয়সেই ওরা গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে জীবন সংগ্রাম শুরু করে। মাত্র আট হাজার টাকা বেতনে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ওরা কাজ করে যায় অন্যের স্বপ্ন বুননে! কিন্তু নিজেদের উচ্চশিক্ষা অর্জন ও উদ্যোক্তা হয়ে উঠার যে স্বপ্ন সেটা কি তবে অধরাই থেকে যাবে! তারা যখন তাদের স্বপ্নের কথা তাদের সহকর্মীদের জানায় তখন প্রায় সবাই নিরুৎসাহিত করেছিল আর শুনতে হয়েছিলো নানারকম টিটকারি! তারা সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলো হাসির পাত্র হিসেবে। তারা তবু দমে যায় না, স্বপ্ন দেখে কোন এক যাদুকরী মুহূর্তের, আলাদিনের চেরাগের অপেক্ষায় দিন কাটতে থাকে তাদের।
একদিন হঠাৎ করেই জানতে পারে যে গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য “এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন “ চালু করেছে উচ্চশিক্ষা বৃত্তি। স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার একধাপ এগিয়ে যাবার এই সুযোগ তাদের চোখে আনন্দ অশ্রুর বন্যা বইয়ে দেয়। তারা উচ্চশিক্ষার এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে থাকে, পাশাপাশি অংশগ্রহন করতে থাকে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে ও প্রতিযোগিতায়। স্নাতক শেষ করে ওরা চারজন শুরু করে সম্পূর্ণ নারী কর্মী দ্বারা পরিচালিত “আভা লিমিটেড” নামের একটা বায়িং হাউজের উদ্যোগ। তাদের এই উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সম্পূর্ণ নারী কর্মী দ্বারা পরিচালিত ‘আভা লিমিটেড’ নামক উদ্যোগ শুরু করতে আকাশসমান অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছেন বাংলাদেশের মহীয়সী নারী উদ্যোক্তা ড. রুবানা হক। ‘
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন’ এর ভিসি ও আনিসুল হক ফাইন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক তাদের সার্বক্ষণিক মেন্টরিং করে চলেছেন! তিনি তাদের স্বপ্নকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে সহযোগিতা করছেন। আনিসুল হক ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদান ও উৎসাহই ছিলো তাদের প্রাথমিক মূলধন।
নিজেদের মেধা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আভা লিমিটেড বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল জামদানিকে ওয়েস্টার্ন ড্রেসের সাথে ফিউশন ও ব্লেন্ড করে বোম্বার জ্যাকেট তৈরি করে বায়ারদের নজর কারে! ঢাকার বনানীতে একটা এক্সিবিশনে ‘নেভাল’ নামক বায়ার তাদের সাথে প্রথম চুক্তি করে। আর এভাবেই অফিসিয়াল যাত্রা শুরু হয় সম্পূর্ণ নারী কেন্দ্রিক ‘আভা লিমিটেড’ নামক এক ভিন্ন ধারার গার্মেন্টস উদ্যোগের যেটা কাজ করবে নারীর ক্ষমতায়নেও।