আহ্! ব্যবসা আর ব্যবসা! বেশী কিছু নয়, দুটো ব্যবসা নিয়ে দু’টো কথা বলি। বছর খানেক আগে নেট ঘেটে একটি ই-কমার্স সাইট পেলাম যার নাম easy.com.bd এই সাইট থেকে মোবাইল ও ওয়াইমেক্স ইন্টারনেট রিচার্জ করা যেত। পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে লেখা ছিল DBBL NEXUS, VISA, MASTERCARD,BRAC BANK কার্ডের নাম। কিন্তু কি করে বিশ্বাস করব যে এর মাধ্যমে রিচার্জ করে আমি প্রতারণার স্বীকার হবো না? ওয়েব দুনিয়াতে তো কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার লক্ষ লক্ষ প্রমাণ আছে। কোন বিশ্বাসে আমি আমার কার্ডের গোপন নাম্বারটা ঐ সাইটে ইনপুট করব? ভেবেচিন্তে আমার ব্যাংকে ফোন দিলাম ইনফরমেশনের জন্য। ব্যাংক আমাকে নিশ্চিত করল যে এটা ব্যাংকের অনুমোদিত এবং শতভাগ সিকিউরড সাইট। কোন গ্রাহক কোন প্রকার জালিয়াতির স্বীকার হলে ব্যাংক তার দ্বায়দায়িত্ব নেবে। এরপর অনেক বার সাইটটি থেকে মোবাইল রিচার্জ করেছি নির্বিঘ্নে। যদিও বর্তমানে কোন এক অজ্ঞাত কারণে টেলিটক ছাড়া অন্য রিচার্জ গুলো ওরা বন্ধ রেখেছে। আরেকটি সাইট পেয়েছিলাম রকমারি ডট কম। বইয়ের সাইট। এই সাইটের পেমেন্ট সিস্টেম হলো অনলাইনে অর্ডার দেবেন আর বই হাতে পেয়ে তারপর টাকা পরিশোধ। এই সিসটেমে তিনটি বই কিনেছি।
তারমানে দু’রকম ই-কমার্স পেলাম। একটা হলো আগে টাকা দাও পরে পণ্য পাবে, আরেকটা হলো আগে পণ্য নাও তারপর টাকা দাও।
এবার কেন এই কথাগুলোর অবতারণা সে কথায় আসি, ইদানিং চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব, উদ্দ্যেক্তা প্রচারণা গ্রুপের মাধ্যমে কিছু ফেসবুক পেজের লিংক পাই যেখানে পেজের মালিক তার বিভিন্ন প্রোডাক্টের বর্ণনা দিয়ে থাকেন এবং টাকা পাঠালে (বিকাশ বা অন্য মাধ্যমে) পণ্য পৌছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়ে থাকে। আমার প্রশ্ন হলো অনলাইন কেনাকাটার জন্য এটা কতটুক আইনসঙ্গত, বিশ্বাসযোগ্য এবং বৈধ মাধ্যম? এর মাধ্যমে প্রতারণার স্বীকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী নয় কি?
কয়েকদিন আগে এক লোক উদ্দ্যেক্তা প্রচারণা গ্রুপের মাধ্যমে তার একটি পণ্যের প্রচারণা বেশ জোরসে চালিয়েছেন এবং উনি শুধুমাত্র একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলেছেন টাকা পাঠালেই উনি পণ্যটি দেশের যেকোন প্রান্তে পৌছে দেবেন। উনাকে আমার বেশ সন্দেহজনক মনে হলো। আমি উনাকে বললাম উনার ঠিকানা দিতে, আমি উনার থেকে সরাসরি পণ্যটি ক্রয় করতে চাই। উনি ঠিকানা দেয়ার তো দূরের কথা, আমার কমেন্টর জবাবই দেয়ার প্রয়োজনবোধ করলেন না। উনার সাথে এমন ঘটনা আমার একাধিকবার হয়েছে।
উনি যদি প্রতারক হয়ে থাকেন আমি নাহয় 3500 টাকা আক্কেল সেলামি দেয়া থেকে বেঁচে গেলাম, অনেকে তো ধরা খেতেন পারেন, তাই না? যদি কেউ আসলেই প্রতারণার স্বীকার হয়ে থাকেন তবে উনি কি ‘‘উদ্দ্যেক্তা প্রচারণা গ্রুপে’’ কে গালি দেবেন না? বলবেন না যে এখানে কিছু প্রতারকের আখড়া? এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা যদি ঘটেই যায় তবে এর দায়ভার কেন উদ্দ্যেক্তা প্রচারণা গ্রুপে নেবে? আমার মতে যাদের বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল নাই তারা ই-কমার্স করতে চাইলে গ্রাহকে পণ্য পৌছে দেবেন, পণ্য হাতে পেয়ে গ্রাহক টাকা পরিশোধ করবেন এই সিস্টেম ব্যবহার করতে বাধ্য করা উচিত। যেনতেন ভাবে যেনে ই-কমার্স বানিজ্য গড়ে উঠতে না পারে এই ব্যপারে সচেতনতা তৈরীতে গ্রুপ এডমিনদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
আরেকটি কথা, এই গ্রুপ দু’টোতে ই-কমার্স ব্যবসায় উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসার মতো আরামদায়ক আর লাভজনক ব্যবসা তাবত দুনিয়াতে আর নাই। কেনরে ভাই? ইন্টারনেট রিলেটেড আর কোন ব্যবসা কি দুনিয়াতে নাই? ওয়েব রিলেটেড নতুন করে কিছু করে দেখান না? আবার কেউ ভেবে বসবেন না আমি ই-কমার্সকে নিরুৎসাহিত করছি। আমি আসলে বলতে চাইছি যে, যে যেটার যোগ্য সে সেটাই করা উচিত।
এ ছাড়া আরেক জাতের ব্যবসায়ী খুব নজর কেড়েছে। তারা পোষাক রিলেটেড ব্যবসা বলতে শুধু টি-শার্ট ব্যবসা করতে চায়। কেনরে ভাই? মানুষ কি আগাগোড়ায় আর কিছু পরে না? পোষাক নিয়ে ডিফারেন্ট কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে না কেন? এত জনে শুধু টি-শার্ট ব্যবসার উপর ঝাঁপাইয়া পড়লে তো এই সেক্টরের বারোটা বেজে যাবে।
জাতি হিসেবে আমাদের সমস্যা হলো একজন যদি কোন কিছু করে সফল হয় তবে অন্যরা সেটার জাত মারা পর্যন্ত চালিয়ে যেতে চাই। একজন উদ্যেক্তা হয় তো টি-শার্ট ব্যবসা করে সফল হওয়ার গল্প শোনাল আর অমনি আমাদের মাথায় টি-শার্টের পোকা ঢুকে গেল। একজন হয় তো ই-কমার্স করে সফল হওয়ার গল্প বলল আর অনেকের মাথায় ই-কমার্স ঢুকে গেল। আমি যতটুকু ধারণা করতে পারি চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব গ্রুপের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে বেচা কেনায় উৎসাহিত করা না, মানুষকে প্রোডাকটিভ বা সৃজনশীল কিছু করতে উৎসাহিত করা, উদ্যেক্তা হতে উৎসাহিত করা। মনে রাখবেন একজন দোকানদার কিন্তু একজন উদ্যেক্তা না।
লিখেছেন- Golam Sarwar Shazal