আনিস উদ দৌলা এদেশের একজন সফল উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি ACI এর চেয়ারম্যান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তিনি ব্যক্তিনির্ভর না রেখে, তিনি কর্পোরেট এ রুপ দিয়েছেন। তৈরি করেছেন, এদেশের জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড।
ছোটবেলায় তিনি প্রকৌশলী হতে চেয়েছেন। কিন্তু ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু ম্যাথের ভয়ে এটাও মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হলেন করাচিতে একটি ইনস্টিটিউটের লোকপ্রশাসন বিভাগে। বিদেশি এক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সুবাদে নাম লেখালেন উদ্যোক্তার তালিকায়। এরপর হল এসিআইয়ের আবির্ভাব।
বর্তমানে বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা লেনদেন বা টার্নওভারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলো ACI। এর অধীনে কোম্পানি আছে প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, অটোমোবাইল, ভোগ্যপণ্য, সুপারস্টোর মিলিয়ে বহু খাতে তাদের ব্যবসা।
আনিস উদ দৌলার জন্ম ১৯৩৪ সালে, ফরিদপুরে। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি কৌঁসুলি এর সন্তান আনিস উদ দৌলা ছিলেন সাত ভাইবোনের মধ্যে ছয় নম্বর। তার বাবা ছিলেন অনেক সুশৃঙ্খল ও সন্তানদের বেড়ে ওঠাও তাই সুশৃঙ্খল। বাবার কাছ থেকে শৃঙ্খলার পাশাপাশি সততাও শিখেছেন আনিস উদ দৌলা।
পদার্থবিজ্ঞানে পড়াকালীন অবস্থাতেই আনিস উদ দৌলা একদিন বিভাগে এশিয়া ফাউন্ডেশনের একটি বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি দেখলেন, যেখানে করাচির একটি ইনস্টিটিউটে পড়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। সেটি আবার চালাত আমেরিকানরা। ‘আই কিউ’ পরীক্ষাপ্রার্থী ছিলেন ৩০০ জন। আনিস উদ দৌলা বৃত্তিটি পেলেন, করাচিতে লোকপ্রশাসনে ভর্তি হলেন। তাঁর মতে, এটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরিতে ঢুকেন পাকিস্তান অক্সিজেনে, আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক পদে।
পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পর ১৯৭০ সালে ঢাকায় বদলি হন আনিস উদ দৌলা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে।আনিস উদ দৌলা জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বিমানবাহিনীতে যাতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে না হয়, এ জন্য তাঁরা ইচ্ছে করে কারখানা বন্ধ করে দিলেন। বললেন, সংস্কার করতে হবে। নথিপত্র এমনভাবে তৈরি করলেন, যাতে সেটা ধরা না যায়। এতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হলো, যা উড়োজাহাজ চালাতে লাগে।
এরপর ১৯৮৭ সালে আনিস উদ দৌলা ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (আইসিআই) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটিকে দুই বছরের মধ্যে লাভে আনেন তিনি। পাঁচ বছরের মাথায় আইসিআই জানায়, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের ছোট ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। আনিস উদ দৌলাকে তারা বাংলাদেশের ব্যবসা কেনার প্রস্তাব দেয়। আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। তারা বলল, টাকা আপনি ধীরে ধীরে দেন। কিন্তু কর্মীদের ভালো রাখতে হবে। এটাই শর্ত। এরপর পাঁচ বছরে আমি অর্থ শোধ করেছি। কর্মীদের একজনও আইসিআইকে অভিযোগ জানায়নি।’
আইসিআইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হলো এসিআই। লোগোও কাছাকাছি। এসিআই পণ্যের মান ঠিক রাখা, কর্মীদের সুরক্ষা ও জীবনমানের উন্নতি, ব্যবস্থাপনায় মান রক্ষার ওপর জোর দিল। সুফল পেল দ্রুতই। মানুষের জীবনমানের উন্নতি’—এটাই এসিআইয়ের মূলনীতি। এসিআইও জীবনমানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে, এমন পণ্যের ব্যবসা করে। ভবিষ্যতে সম্প্রসারণেও সেটা মাথায় রাখে।
তার ভাষ্যমতে এসিআইয়ের সফলতার কারণ তিনটি। যেমন এক. পণ্যের মান রক্ষা। দুই. কর্মীদের ভালো রাখা। কারণ, কর্মীরা ভালো থাকলে নিজের সবটুকু প্রতিষ্ঠানকে দেয়। তিন. ক্রেতার আস্থা ও নীতিনির্ধারকদের বিশ্বস্ততা অর্জন।
এসিআইয়ে এখন নেতৃত্ব দেন আনিস উদ দৌলার একমাত্র পুত্র আরিফ দৌলা। এখনও আনিস উদ দৌলা সকালে কার্যালয়ে যান। সারা দিন কাজ করেন।
এসিআই গ্রুপের অধীনে এখন কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, নিত্যব্যবহার্য পণ্য, বাণিজ্যিক যান, মোটরসাইকেল ইত্যাদি খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের।
গ্রুপের মোট বার্ষিক টার্নওভার বা পণ্য বিক্রি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত এসিআইয়ের দুই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ছিল ৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।এসিআইতে কাজ করেন ১০ হাজারের মতো কর্মী।
তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া