spot_imgspot_img

উদ্যোক্তা পাঠচক্র ৩ – The Five Temptations of a CEO সার সংক্ষেপ

উদ্যোক্তাদের দৈনন্দিন ব্যবসায়িক কাজর্কম, ব্যবসার গ্রোথ ইত্যাদি বিষয় ছাড়াও প্রতিনিয়ত নিজেদের ডেভলপমেন্টের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। সেটা তাঁর বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্টের কিংবা নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন! যাই হোক না কেন। আর এটা করতে গেলে নিয়ম করে পড়াশোনার কোন বিকল্প তো নেই। সফল ব্যক্তিমাত্রই নিয়মিত পড়াশোনা করেন। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে আমরা জেনেছি বিল গেটস্ বছরে প্রায় ৫০ টির বেশি বই পড়েন! কিন্তু আমাদের দেশে উদ্যোক্তাদের সেই সময় কোথায়?

আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা ওয়ান ম্যান আর্মি। সারাদিন এটা সেটা নিয়ে ব্যস্ত থেকে নিজের জন্যে আলাদা করে পড়াশোনার আর সময় বের করার সুযোগ হয় না। কিন্তু প্রায় সবাই বিষয়টা অনুধাবন করেন যে, পড়া থামানো মানেই পিছিয়ে যাওয়া। উদ্যোক্তাদের এই সমস্যার সমাধানে শত ব্যস্ততার মাঝেও মূলত পড়ার অভ্যাস গড়তে সহায়তা করার লক্ষ্যে আমাদের “চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব গ্রুপ” এর পক্ষ থেকে “উদ্যোক্তা পাঠচক্র” ভাবনার উৎপত্তি।

এই আড্ডায় আমরা পূর্বেই কোন একটা বই নির্ধারণ করে নেই। এরপর সবাই মিলে একটা নির্দিষ্ট সময় একসাথে বসে ঐ বইয়ের প্রাপ্ত জ্ঞান ও নিজেদের এক্সপেরিয়েন্স একে অপরের সাথে শেয়ার করি। এটা কোন আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়। এখানে বই নিয়ে গল্প আর চা-পুরি খেতে খেতে আড্ডা দেয়া হয়। আমাদের চেষ্টা থাকে প্রতি মাসে যেন অন্তত একবার কোন একটি বই নিয়ে আড্ডায় বসা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৬ অক্টোবর ২০১৮ ইং মিরপুরের একটি ভেন্যুতে তৃতীয় উদ্যোক্তা পাঠচক্রের আয়োজন করা হয়।

এবারের পাঠচক্রের জন্যে নির্ধারণ করা হয়েছিল প্যাট্রিক লিঞ্চিওনি’র বিখ্যাত বই “দ্যা ফাইভ টেম্পটেশনস অব এ সিইও”।
পাঠচক্র বিকাল ৪ টায় শুরু করার কথা থাকলেও শুরু করতে করতে ৫ টা বেজে গেল। ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত দূর্দান্ত আলোচনা হয়েছে। আমি একটু বকর বকর করার সুযোগ বেশি পেয়েছি তবে উপস্থিত সবার সত্বস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে আড্ডাটি বেশ জমে উঠে। সিইও এর ৫টি টেম্পটেশনস নিয়ে মূলত আমি আর Zahidul Islam (হেড অব বিজনেস, চুইঝাল.কম ও ম্যাজিক রুটি মেকার) আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের অবস্থান ও উদ্যোগ থেকে টেম্পটেশনগুলোর প্রয়োগ ও ওভারকামের উপায় নিয়ে ডিসকাস করেছি। অংশগ্রহণকারীগণ তাদের অবস্থান থেকে নানান বিষয়ে ইনপুট দিয়েছেন। তৃতীয় উদ্যোক্তা পাঠচক্রের আড্ডায় সব মিলিয়ে আমরা ৭ জন উপস্থিত ছিলাম। শেষে একজন অংশগ্রহণকারীর স্পন্সরে চা বিস্কুট খেয়ে আড্ডার সমাপ্তি হয়েছে। তবে অংশগ্রহণকারীদের জোর দাবি – প্রতি মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে যে এই পাঠচক্রের আড্ডাটি নিয়মিত করা হয়।
পাঠচক্রে অংশ নিতে একজন সাভার থেকে এসেছেন। আরেক ভাই উত্তরা থেকে। স্বদিচ্ছা আর জানার ইচ্ছার কাছে দূরত্ব, জ্যাম! এইগুলো আসলেই তুচ্ছ। আরেকটা বিষয় আবারো নতুন করে অনুধাবন করলাম – উদ্যোক্তাদের অযুহাত বলতে কোন হাত থাকতে নেই। কষ্ট করে এই আয়োজনে যারা এসেছেন তাদের সকলকে গ্রুপের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আয়োজনে হয়তো আমাদের কিছু ভুল ক্রুটি ছিল। সেগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। আপনাদের যে কোন মতামত, মন্তব্য ও পরামর্শ আমাদের কার্যক্রমগুলোকে আরো সুন্দর ও গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
পাঠচক্রে আমরা সিইও এর ৫টি টেম্পটেশন এবং এর থেকে ওভারকাম করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই তাদের পারসোনাল বিজনেস এক্সপেরিয়েন্স থেকে নিজেদের টেম্পটেশনগুলো ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে প্রয়াস পেয়েছেন।

সিইও’র ৫টি টেম্পটেশনঃ
১. প্রতিষ্ঠানের চেয়ে নিজের ক্যারিয়ার ও স্ট্যাটাসকে প্রাধান্য দেয়া।
২. জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে সঠিক জবাবদিহিতা আদায় করতে অনাগ্রহ।
৩. স্বচ্ছতার চেয়ে বেশি নিশ্চয়তা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া প্রবণতা।
৪. প্রতিষ্ঠানে প্রোডাক্টিভ কনফ্লিক্ট চর্চার বিপরীতে ফলস হারমনি বজায় রাখা।
৫. নিজে আক্রান্ত হবার ভয়ে টীম মেম্বারদের বিশ্বাস করতে না পারা।

৫টি টেম্পটেশন কাটিয়ে উঠতে করনীয় পদক্ষেপঃ
১) প্রতিষ্ঠানের মিশন, ভিশন, গোলস সুস্পষ্টভাবে আইডেন্টিফাই করে কাজ করতে হবে। টীমও প্রতিষ্ঠানকে সফল করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে কেননা, টীম বা প্রতিষ্ঠানকে সফল করাই একজন সিইও এর সার্থকতা।
২) কারো প্রিয়পাত্র হবার, কারো কাছে ভাল হবার বাসনাকে উড়িয়ে দিয়ে কাজের জন্যে যথাযথ জবাবদিহিতা আদায় করে নেয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। তাতে করে সামনে কিংবা আড়াকে কেউ অপছন্দ করলেও কিছু যায় আসে না।
৩) নিশ্চিত হয়ে, প্রলম্বিত ডিসিশন দেয়ার চেয়ে স্বচ্ছ ও দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
৪) সবাইকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা বাদ দিয়ে কাজকর্ম বিষয়ে প্রোডাক্টিভ তর্ক, আলোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে যেন পুরো টীম তাতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টাকে জাস্টিফাই ও ক্লিয়ার করে নিতে পারে।
৫) ভুল সিদ্ধান্ত বা ভুল কাজের জন্যে ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত হবার ভয় কাটিয়ে উঠে টিম মেম্বারদের বিশ্বাস করতে হবে। ভুল স্বীকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। টীম মেম্বারদের ক্যারিয়ার যেন সিইও এর কাছে নিরাপদ থাকে তেমনি সিইও নিজেও টীমের কাছে নিরাপদ! এইটুকু বিশ্বস্ততার চর্চা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

দ্যা ফাইভ টেম্পটেশনস অব এ সিইও বইয়ে বর্ণিত বিষয়গুলো যেন আমাদের দেশের উদ্যোগগুলো নিত্যদিনের সমস্যার প্রতিরূপ। লীডারের আমিত্ব আর অহংবোধের ফলে একটা সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান খুব সহজেই গুটিয়ে যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানের উন্নতির স্বার্থে উদ্যোক্তাদের এই বইটি পড়া এবং এর থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিজেদের জীবনে ও উদ্যোগে বাস্তবায়ন করার কোন বিকল্প নেই বলেই আমি মনে করি। লেখক প্যাট্রিক লিঞ্চিওনি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা। চমৎকারভাবে লীডারশীপ ডিলেমাগুলো তুলে ধরে সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে তিনি সারা পৃথিবীর তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্যে একটা অসাধারণ কাজ করেছেন।

Get in Touch

Comments are closed.

spot_imgspot_img

Related Articles

spot_img

Latest Posts