‘নিজে কিছু একটা করো।’ শাশুড়ি মায়ের অনুরোধ ছিল সবসময়। পড়াশোনা শেষ করার পর বাসায় বসে একসঙ্গে দারুণ কয়েকটি চাকরির অফার পান মাসুমা খাতুন শাম্মী। কিন্তু কোনোটাই বেছে নিতে পারেননি। কারণ, তখন শ্বশুর বাবা অসুস্থ। সন্তানদের পাশাপাশি তাঁকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি ।
২০১১ সালে শ্বশুর বাবা মারা যান। এর কিছুদিন পর থেকেই আবার শাশুড়ি মায়ের অনুরোধ। কিন্তু ব্যবসার ব্যাপারে ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক দিক থেকে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।
![](https://www.uddokta.net/bn/wp-content/uploads/2023/12/DSC9012.jpg)
শেষ পর্যন্ত ব্যবসার জগতে পা রাখেন একপ্রকার বাধ্য হয়ে। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর, শুরু হয় নতুন পথচলা, অন্যরকম যুদ্ধ। রাজধানীর পান্থপথে যাত্রা শুরু করেন মাদলের। তখন তার সঙ্গে ছিলেন একজন কর্মী।
নয় বছরের পথচলায় অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। ছিল অনেক বাঁধা। কিন্তু থেমে থাকেননি। রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, এখনো করছেন।
নয় বছর পর আজ মাদল অনেকের কাছেই খুব পরিচিত নাম। এই সময়ের মধ্যে তিনি মাদল নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন- মাদল, মাদল শস্যভান্ডার ও মাদল খাবারঘর। ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে ‘কৃষি চন্দ্রিমা’ সমন্বিত কৃষি খামারের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। যুক্ত আছেন ডেইরি ফার্মের সঙ্গে।
![](https://www.uddokta.net/bn/wp-content/uploads/2023/12/IMG-20231114-WA0010.jpg)
তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন দেড় শতাধিক কর্মী কাজ করছেন। নাটোরে তাঁর খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির উদ্যোগে যুক্ত আছেন অনেকগুলো পরিবারের ৩৭ জন নারীকর্মী। বিষমুক্ত আম উৎপাদনে তিনি রাজশাহী ও নাটোরের অনেক নারীকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। তাঁর হাতে ভাজা মুড়ি, ঢেঁকিছাঁটা চিড়া, ডালের বড়ি এবং নবজাতকদের জন্য কাঁথা ও পোশাক তৈরির উদ্যোগে যুক্ত অনেকগুলো পরিবারের নারীরা। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে তাঁত এবং তাঁতিদের সঙ্গে যুক্ত তিনি।
একদিকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করছেন, অন্যদিকে প্রাকৃতিক ও বিষমুক্ত পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি বিপণন করছেন। কাজ করছেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত নিয়ে। তাঁর উৎপাদিত পণ্য এখন দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও যাচ্ছে।
২০২২ সালের কার্যক্রমের জন্য মাদলের উদ্যোক্তা মাসুমা খাতুন শাম্মীকে উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০২২ প্রদান করা হয়।