বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি

▷ ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আমার কী কী লাগবে?

উত্তর : ট্রেড লাইসেন্স হল ব্যবসার প্রথম ডকুমেন্ট। এটি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে স্থানীয় সরকার প্রশাসনের আওতায় সেখান থেকে এটি সংগ্রহ করতে হয়।

ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের সঙ্গে যা যা দিতে হবেঃ

  • সাধারণ ট্রেড লাইসেন্সঃ অফিস/প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার রশিদ অথবা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের কপি
  • শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাড়ার রশিদ বা চুক্তি কপি
  • পরিবেশ সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র
  • প্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত মানচিত্র
  • অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র
  • সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিয়মাবলী মেনে চলা হবে এমতে ১৫০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারপত্র।
  • ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত হাসপাতালের ক্ষেত্রেঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন।ট্রেড লাইসেন্সের জন্য উদ্যোক্তাদের আবেদন করতে হয়। সকল স্থানীয় সরকারের নিজস্ব ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের ফরম রয়েছে। একটি নমুনা ফরম এখানে (http://www.dhakacity.org/pdf/trade_form.pdf) দেখা যাবে।

ট্রেড লাইসেন্স বিশেষভাবে শুধু লাইসেন্সধারী ব্যক্তির নামে প্রদান করা হয় এবং তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। এই লাইসেন্স ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারবে না। নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স সংশ্লিস্ট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদান করে থাকেন। ট্রেড লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফি লাইসেন্স ফরমে উল্লেখিত যে কোন ব্যাংক-এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

• লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রেঃ
– মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল
– সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন
• অংশিদারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে
– অংশিদারি চুক্তি নামা
• ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে
– জেলা প্রশাসকের অনুমতি
• রিক্রুটিং এজেন্সীর ক্ষেত্রে
-মানবসম্পদ রপ্তানী ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স
• অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষেত্রে
– অস্ত্রের লাইসেন্স
• ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে
– ড্রাগ লাইসেন্সের কপি
• ট্রাভেলিং এজেন্সীর ক্ষেত্রে
– সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন

১। পূর্বের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
২। দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর বিষয়ক কর্মকর্তা নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করবেন।
৩। ফিঃ লাইসেন্স নবায়ন ফি নতুন লাইসেন্সের সমপরিমাণ। এই ফি আগের মতোই লাইসেন্স ফরমে উল্লিখিত ব্যাংকে প্রদান করতে হয়।

ঢাকা দক্ষিণের প্রয়োজনীয় দলিলাদির তালিকা এখানে দেখা যাবে
http://www.dhakacity.org/E-governance/TradeLicence/condition_image.php

▷ ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য কত টাকা ফী দিতে হয়?

উত্তর : এটি নির্ভর করে একটি ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় কয়টি ট্রেড অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তার ওপর। নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ এটা নির্থারণ করে রেখেছে।

▷ ট্রেড লাইসেন্দের মেয়াদ কতদিনের?

উত্তর : ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ বছর ভিত্তিক। এবং তা অর্থ বছরের সঙ্গে সম্পর্কিত। উদাহরন হিসাবে বলা যায় যে লাইসেন্স জুলাই ২০১৩ এ ইস্যু হবে তার মেয়াদ হবে ৩০ জুন ২০১৪ পর্যন্ত। আবার যে লাইসেন্স মার্চ ২০১৪ সালে ইস্যু হবে সেটিরও মেয়াদ হবে ৩০ জুন ২০১৪।

 

▷ আমার বাড়ি ঝিনাইদহে। সেখানে আমার একটি বিপনন প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স আছে। আমি এখন ঢাকাতে ব্যবসা করতে চাই। আমার কী নতুন লাইসেন্স করতে হবে?

উত্তর : পারবেন। কোন নতুন লাইসেন্স করতে হবে না। তবে, ঢাকার অফিসে সাইনবোর্ড লাগাতে হলে সাইনবোর্ড কর দিতে হবে, ঢাকায়!

 

▷ আমরা কয়েকজন মিলে একটি লিমিটেড কোম্পানি করতে চাই। আমাদের ধাপে ধাপে কী কী করতে হবে?

উত্তর : লিমিটেড কোম্পানি করার জন্য ১৯৯৪ সনের কোম্পানি আইনে কোম্পানী হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এটি অফিস অবদি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মসে করতে হয়। বর্তমানে সকল কাজ অনলাইনে করা যায়। অনলাইনে কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো হাতের কাছে রাখলে ভাল। কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের ধাপগুলো –
ক. নামের ক্লিয়ারেন্স
খ. রেজিস্ট্রেশন
গ. রেজিস্ট্রেশন সার্টিকিকেট সংগ্রহ

ক. নামের ক্লিয়ারেন্স-
নামের ক্লিয়ারেন্সের জন্য আরজেওসির পোর্টালের প্রি-রেজিস্ট্রেশন সেকশন থেকে এটি সরাসরি করা যায়। নামের ক্লিয়ারেন্সের জন্য ৬০০/- ছয়শত টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হয়। একবার নামের ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার পর চয়মাসের জন্য এটি বলবৎ থাকে। যদি এর মধ্যে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করা না যায়, তাহলে এই ক্লিয়ারেন্স বাতিল হয়ে যায়। তবে, ইচ্ছে করলে আবেদন করে (পোর্টালে, অনলাইনে) ১০০ টাকা ফি দিয়ে সময় বাড়ানো যায়।

খ. রেজিস্ট্রেশন
রেজিস্ট্রেশনের জন্য আরজেওসির পোর্টালের রেজিস্ট্রেশন সেকশন থেকে সরাসরি অলাইনে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। Apply for registration এর মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু করে তা সম্পন্ন করতে হয়।

প্রাইভেট কোম্পানি নিবন্ধনের স্ট্যাম্প ও রেজিস্ট্রেশন ফী এর তথ্য- এই লিংক থেকে পাওয়া যাবে।

http://www.roc.gov.bd:7781/psp/notice?p_notice_id=38
পোর্টালের General সেকশনে একটি ফি ক্যালকুলেটরে হিসাব করে নেওয়া যায়।

গ. সার্টিফিকেট কপির জন্য আবেদন
আরজেওসির পোর্টালের Post Registration সেকশন থেকে সরাসরি অলাইনে ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা যায়।

▷ আমরা একটি অংশিদারী ফার্মস করতে চাই। আমাদের করণীয় কী?

উত্তর : প্রথমে অংশিদারদের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে। তারপর অংশিদারদের মধ্যে ব্যবসার উদ্দেশ্য, কার্যপদ্ধতি ও লভ্যাংশ বন্টনের শর্ত সম্বলিত চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হতে হবে। এটি করতে হবে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। এরপর নিয়মানুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যাবে।
এছাড়া যদি নিবন্ধনের আগ্রহ থাকে তাহলে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস-এও নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধক আবশ্যক নয়।

▷ কীভাবে টিআইএন করবো?

উত্তর : ১লা জুলাই ২০১৩ থেকে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করা যাবে এবং অনলাইন থেকেই এই সার্টিফিকেট প্রিন্ট করা যাবে, কোন অফিসে যেতে হবেনা।
http://incometax.gov.bd

▷ আমার টিআইএন আছে। আমার কি নতুন টিআইএন করতে হবে, আবার? 

উত্তর : হ্যা। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বর্তমান ১০ ডিজিটের টিআইএনের কার্যকারিতা থাকবে না। কাজে আপনাকে নতুন নম্বর নিতে হবে এবং এবছরের রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় সেটি উল্রেখ করতে হবে।

▷ আমার একটি স্বত্ত্বাধিকারি প্রতিষ্ঠান আছে। আমার কী প্রতিষ্ঠানের নামে একবার এবং আমার নিজের নাম দুইটি টিআইএন করতে হবে?

উত্তর : স্বত্তাধিকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা টিআইএন হয় না। স্বত্তাধিকারির নামে কেবল টিআইএন হয়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর মালিককে আয়কর দিতে হয় যদি তা করযোগ্য হয়।

▷ আমরা চারজন একটি অংশিদারী ফার্মের অংশিদার; আমাদের সবার কী টিআইএন লাগবে?

উত্তরঃ টি.আই.এন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার হল একটা নাম্বার যেটার হিসেবে আপনি ট্যাক্স (ইনকাম ট্যাক্স) জমা দেন। আপনার বাৎসরিক করযোগ্য আয় যদি ২ লাখ ২৫ হাজার (২০১৩ বিধানে) টাকা হয় তবেই আপনার টি.আই.এন লাগবে, অথবা যদি আপনার,

১) জেলা শহরে বাড়ি, গাড়ি বা আই.এসডি ফোন থাকে
২) ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং ব্যাঙ্ক একাউন্ট থাকে
৩) ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি, চার্টার্ড/কস্ট একাউন্টেন্ট হন
৪) ভ্যাট নিবন্ধিত কোন ক্লাব বা চেম্বার অব কমার্স বা যেকোন ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য হন
৫) যেকোন স্থানীয়/জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকেন
৬) সরকারি/বেসরকারি কাজের জন্য টেন্ডারে অংশ নেন।

আপনার ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাঙ্ক একাউন্ট থাকলেই টিন লাগবে। অংশিদারদের সবার আলাদা টিন লাগবে এবং ফার্মের জন্যও একটা টিন লাগবে। আয়কর নিজেরো দিতে হবে ফার্মেরও দিতে হবে, তবে ফার্মের পরিশোধিত উৎস করের জন্য ব্যাক্তিগত রিটার্নে আপনি ছাড় পাবেন।

▷ আমরা তিনজন একটি লিমিটেড কোম্পানির পরিচালক। আমাদের প্রতিষ্ঠানের আয়কর দেওয়ার পর আমরা যে লভ্যাংশ পাই সেটির ওপর কী আয়কর দিতে হবে?

উত্তরঃ কোম্পানী’র আয়ের উপর যে কর দেবেন সেটা কোম্পানি আইনে সরকারের প্রাপ্য, আপনার ব্যাক্তিগত আয়ের উপরও আয়কর দিতে হবে। লভ্যাংশ আপনার আয়ে যোগ করার পর যদি আয়কর এর সর্বনিম্ন ধাপের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সাধারণ নিয়মে আয়কর হিসেব করে আয়কর দিতে হবে। তবে উৎসে কর্তনকৃত করের জন্য আপনি আয়করে ছাড় পাবেন। যদি আয়কর না ও হয়, তবু আপনাকে আয় ব্যয়ের হিসাব যাকে রিটার্ন বলে জমা দিতে হবে।

▷ স্বত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং প্রতিষ্ঠানের কী আলাদা করে আয়কর দিতে হবে?

উত্তর : প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুসারে ভ্যাট দেবে এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজস্ব আয়কর দিবে। মালিক আয়কর রিটার্ন জমা দেবে, করযোগ্য হলে রিটার্নের সাথে কর-ও দেবে, করযোগ্য আয় না হলে, শুধু রিটার্ন দেবে।

প্রশ্ন :মূল্য সংযোজন কর কী?

উত্তর: মূল্য সংযোজন কর (VAT), সংক্ষেপে মূসক, একটি আধুনিক কর যা যেকোনো ব্যবসায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট মূল্য সংযোজনের ওপর আরোপ করা হয়ে থাকে। দেশীয় পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়, বিদেশী পণ্য আমদানী ও রপ্তানী, দেশাভ্যন্তরে সেবা বা পরিসেবার উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয় ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর আরোপযোগ্য। এই কর উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রয় পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে আরোপ ও আদায় করা হলেও এর দায়ভার চূড়ান্তভাবে কেবল পণ্য বা সেবার ভোক্তাকে বহন করতে হয়। মূসক আরোপের মাধ্যমে আবগারী শুল্ক, বিক্রয় কর ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা দূর হয়েছে। বাংলাদেশে মুসক চালু হয়েছে ১৯৯১ সালে। এখানে মুসক আইন দেখা যাবে।

▷ মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধন বলকে কী বোঝায়?

উত্তর : মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপযোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী বা ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারী বা যে কোন পণ্য বা সেবার আমদানিকারক বা রপ্তানিকারককে সংশ্লিষ্ট করদাতা হিসাবে সনাক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার মূল্য সংযোজন কর বিভাগীয় কার্যালয় হতে একটি নম্বর প্রদান করা হয়। এটিই নিবন্ধন। যে পত্রের মাধ্যমে উক্ত নম্বর প্রদান করা হয় তাকে নিবন্ধনপত্র বলা হয়।

▷ আমার একটি মালামাল সরবরাহের ব্যবসা আছে। আমাকে কি ভ্যাট নিবন্ধন করতেই হবে?

উত্তর : নিন্মোক্ত পণ্য/সেবাদানকারীদের নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক। আপনি যদি এর কোনটির মধ্যে পড়েন তাহলে আপনাকে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

(ক) করযোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী; যার বার্ষিক টার্ণওভার ৬০ (ষাট) লক্ষ টাকা বা তার উর্ধ্বে;
(খ) সে সব পণ্য উৎপাদনকারীর যাদের ক্ষেত্রে টার্ণওভার নির্বিশেষে মূসক নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে;
(গ) করযোগ্য সেবা প্রদানকারী যার বার্ষিক টার্ণওভার ৬০ (ষাট) লক্ষ টাকা বা তার উর্ধ্বে ;
(ঘ) যে সব সেবা প্রদানকারীর ও যাদের ক্ষেত্রে টার্ণওভারের পরিমাণ নির্বিশেষ মূসক নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে:
(ঙ) আমদানিকারক;
(চ) রপ্তানীকারক;
(ছ) ব্যবসায়ী (পরিবেশক, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা)।

▷ কখন, কোথায় ভ্যাট নিবন্ধন করা যায়?

উত্তর: ব্যবসা (পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদান বা কেনা-বেচা) শুরু করার পূর্বে মূসক নিবন্ধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মূল্য সংযোজন কর বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ে “মূসক-৬”ফরমে আবেদন দাখিলের মাধ্যমে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হয়। “মূসক-৬” ফরম সার্কেল/ বিভাগীয় দপ্তর থেকেও সংগ্রহ করা যেতে পারে। নিবন্ধিত হওয়ার পর মূসক বিভাগীয় দপ্তর থেকে মূসক নিবন্ধনপত্র “মূসক-৮” নিবন্ধিত ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, নিবন্ধন গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ধরণের ফি প্রদান করতে হয় না এবং নিবন্ধন নবায়নেরও কোন প্রয়োজন নেই। এরপর নিবন্ধনপত্রের একটি ছায়ালিপি করদাতার ব্যবসায় অঙ্গনে সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে সেঁটে রাখতে হবে এবং সাইনবোর্ড বা পরিচিতি ফলকে নিবন্ধন সংখ্যা দৃষ্টিগোচর হয় এমনভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সকল চালানপত্রেও নিবন্ধন সংখ্যা লিখতে হবে।

▷ ভ্যাট নিবন্ধন আবেদনের সঙ্গে কী কী তথ্য /দলিলাদি দাখিল করতে হবে?

(ক) মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধনের আবেদন পত্র ফরম ‘মূসক-৬’ এ তথ্য সন্নিবেশিত করে পেশ করা;
(খ) হাল অর্থবৎসরের ট্রেড লাইসেন্স এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি;
(গ) টি,আই,এন সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত ছায়ালিপি;
(ঘ) মালিক/ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি সত্যায়িত ছবি;
(ঙ) আমদানিকারকের ক্ষেত্রে নবায়িত আই,আর,সি এর সত্যায়িত ছায়ালিপি;
(চ) রপ্তানীকারকের ক্ষেত্রে নবায়িত ই,আর,সি এর সত্যায়িত ছায়ালিপি;
(ছ) পণ্য উৎপাদনকারীর ক্ষেত্রে মূসক-৭ (পরিশিষ্ট-৩) এ উল্লিখিত তথ্য (ব্লু প্রিন্ট, প্লান্টের বর্ণনা, যন্ত্রপাতির বর্ণনা, উৎপাদিত পণ্য ও ব্যবহৃত উপকরণ স¤পর্কিত ঘোষণা ইত্যাদি);
(জ) ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র/প্রত্যয়নপত্রের সত্যায়িত কপি;
(ঝ) লিমিটেড কোম্পানীর জন্য মেমোরান্ডাম অব আর্টিকেলস, এসোসিয়েশন অব আর্টিকেলস এবং সার্টিফিকেট অব ইন্করপোরেশন, পার্টনারশীপ ব্যবসার ক্ষেত্রে অংশীদারীত্বের চুক্তিপত্র;
(ঞ) জমির/বাড়ির/ভবনের/প্রাঙ্গণের মালিকানা বা ভাড়া সংক্রান্ত কাগজপত্র;
(ঞ) কেন্দ্রীয় নিবন্ধন হলে সংশ্লিষ্ট সকল বিক্রয় কেন্দ্রের/শাখার তালিকা

▷ ভ্যাটের হার কতো?

উত্তর : বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ভিন্ন।

▷ মুসক চালান কী?

উত্তর: মূসক ব্যবস্থায় পণ্য/সেবা সরবরাহকালে পণ্য/সেবা সরবরাহকারী কর্তৃক ক্রেতাকে যে বিক্রয় রশিদ/ মেমো প্রদান করতে হয় তাই মূসক চালানপত্র। মূসক-১১/মূসক-১১ক/মূসক-১১ঘ নামীয় নির্ধারিত ফরমেটে এই মূসক চালানপত্র প্রদান করতে হয়। এছাড়া টার্ণওভার ও কুটির শিল্প তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ক্যাশ মেমো এবং কয়েক ধরনের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিক্রয় চালান, মানিরিসিপ্ট বা চুক্তিনামাকেও সরকার মূসক চালান হিসাবে ব্যবহারের রয়েছে।

▷ কোন ধরণের মুসক চালান কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়?

উত্তর : বিভিন্ন ধরনের চালানপত্রের ব্যবহারঃ
(ক) নিবন্ধিত ক্রেতার নিকট পণ্য/ সেবা বিক্রয় (সরবরাহ) কালে মূসক-১১ (পরিশিষ্ট-১) এবং অনিবন্ধিত ক্রেতার নিকট পণ্য/ সেবা বিক্রয়ের সময় মূসক-১১ক (পরিশিষ্ট-২) ইস্যু করতে হয়। তবে অনিবন্ধিত ক্রেতাকে মূসক-১১ও প্রদান করা যায়। কিন্তু নিবন্ধিত ক্রেতাকে কখনই মূসক-১১ক প্রদান করা যাবে না।
(খ) বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, আইন পরামর্শক, ইমিগ্রেশন উপদেষ্টা, কোচিং সেন্টার, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং বেসরকারি মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ‘মূসক-১১ঘ’ (পরিশিষ্ট-৩) ব্যবহৃত হয়;
(গ) আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি বিল-অব-এন্ট্রি মূসক চালানপত্র হিসেবে গণ্য।
(ঘ) কোন নিবন্ধিত ব্যক্তি নিজস্ব ফরমেটে চালানপত্র ইস্যু করতে আগ্রহী হলে মূসক-১১ ফরম এর তথ্যাদি অক্ষুন্ন রেখে নিজস্ব অতিরিক্ত তথ্যাদিসহ মূসক-১১ চালানপত্র তৈরি ও ইস্যু করতে পারবেন।

▷ আমি কী আমার মতো করে মুসক চালান তৈরি করতে পারবো?

উত্তর : নিজস্ব ফরম্যাট বা কম্পিউটারের মাধ্যমে চালানপত্র প্রদান করা যাবে –
(ক) কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে নিজস্ব ফরম্যাটে বা কম্পিউটারে চালানপত্র তৈরী ও ইস্যু করতে পারবেন;
(খ) কম্পিউটারে চালানপত্র তৈরীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সফট্ওয়্যারে যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে;
(গ) কম্পিউটারে বা নিজস্ব ফরম্যাটে তৈরীকৃত চালানপত্রে ‘মূসক-১১’ ফরম এর সকল তথ্য থাকতে হবে, তবে অতিরিক্ত তথ্য রাখা যাবে।

▷ ভ্যাট কীভাবে জমা দিতে হয়?

উত্তর : অন্যান্য সরকারি আদায়ের মত মুসক ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকেরি নিরাধারিত শাখায় জমা দিতে হয়।

▷ আমদানী রপ্তানির জন্য কি আলাদা কোন লাইসেন্স লাগে?

উত্তর : হ্যাঁ, লাগে। আমদানী করার জন্য ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন লাইসেন্স (IRC) ও বপ্তানী করার জন্য এক্সপোর্ট রেহিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ERC) লাগে।

▷ আমদানী লাইসেন্স করতে কী কী লাগে?কোথা থেকে করতে হয়?

উত্তর : আমদানী লাইসেন্স বা ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে হলে আমদানী-রপ্তানির মহা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালি ব্যাংকের শাখায় সিডিউল ফি জমা দিতে হয়। আবেদন ফরমের সঙ্গে নিচোর দলালাদি জমা দিতে হয়-

ক. ট্রেড লাইসেন্স
খ. ৩ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি
গ. টিআইএন সার্টিফিকেট
ঘ. চেম্বার অব কমার্স বা সংশ্লিষ্ট ট্রেড বডি (যেমন বেসিস, বিসিএস)-এর সদস্যপদের সার্টিফিকেট
ঙ. জমাকৃত ট্রেজারি চালানের মূল কপি
চ. অংশিদারী ফার্ম হলে অংশিদারী চুক্তি অথবা লিমিটেড কোম্পানি হলে সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন, এমওএ(MoA), এওএ(AoA)

আমাদানী রপ্তানির চীফ কন্ট্রোলারের অফিস
১১১-১১৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা।
ওয়েব – http://www.ccie.gov.bd/

▷ আমাদনী লাইসেস্সের ফী ও নবায়ন ফী কতো?

উত্তরঃ বার্ষিক সিলিং (বছরে যত টাকার আমদানী করবেন) অনুসারে আমদানীকারকদের ৬(ছয়)টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ৬ ক্যাটাগরির রেজিস্ট্রেশন ফি ও নবায়নের ফি –

 

ক্যাটাগরি   সিলিং অব বার্ষিক আমদানী রেজিস্ট্রেশন ফি   বার্ষিক নবায়ন ফি
প্রথম   ট. ৫,০০,০০০ ট. ৫,০০০ ট. ৩,০০০
দ্বিতীয়   ট. ২৫,০০,০০০ ট. ১০,০০০ ট. ৬,০০০
তৃতীয় ট.৫০,০০,০০০   ট. ১৮,০০০      ট. ১০,০০০
চতুর্থ      ট.১,০০,০০,০০০   ট. ৩০,০০০ ট. ১৫,০০০
পঞ্চম ট. ৫,০০,০০,০০০       ট. ৪৫,০০ ট. ২২,০০০
ষষ্ট ৫ কোটির উর্ধে   ট. ৬০,০০০    ট. ৩০,০০০

▷ রপ্তানী লাইসেন্স কীভাবে করতে হয়?

উত্তর : আমদানী রপ্তানির চীফ কন্ট্রোলারের অফিস থেকে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে আবেদন করতে হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালি ব্যাংকের শাখায় সিডিউল ফি জমা দিতে হয়। আবেদন ফরমের সঙ্গে নিচের দলালাদি জমা দিতে হয়-

ক. ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত কপি
খ. ৩ কপি পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি
গ. টিআইএন সার্টিফিকেট
ঘ. চেম্বার অব কমার্স বা সংশ্লিষ্ট ট্রেড বডি (যেমন বেসিস, বিসিএস)-এর সদস্যপদের সার্টিফিকেট
ঙ. ফি জমাদাানের ট্রেজারি চালানের মূল কপি
চ. অংশিদারী ফার্ম হলে অংশিদারী চুক্তি অথবা লিমিটেড কোম্পানি হলে সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন, এমওএ(MoA), এওএ(AoA)

▷ রপ্তানী লাইসেন্সের ফি ও নবায়ন ফি কত?

উত্তর : রপ্তানী কারকদের ফি নিন্ম্নরূপ ঃ

 

ক্যাটাগরি রেজিস্ট্রেশন ফি বার্ষিক নবায়ন ফি
রপ্তানীকারক ট. ৭,০০০ ট. ৫,০০০
ইন্ডেন্টর     ট. ৪০,০০০       ট. ২০,০০০

▷ ব্যাংক একাউন্ট করতে কী কী লাগে?

উত্তরঃ বিজনেস একাউন্ট খুলতে হলে প্রোপাইটরশীপ বিজনেস হলে, ট্রেড লাইসেন্স, উদ্দ্যোক্তার ছবি, উদ্দ্যোক্তার টি আই এন, ন্যাশনাল আই ডি কার্ড এর ফটোকপি, ছবি এবং নমিনির ইনফো লাগবে।

পার্টনারশিপ বিজনেস হলে আর্টিকেল মেমোরান্ডাম, সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, পার্টনারশীপ চুক্তি, জয়েন্ট স্টক কোম্পাণীর ছাড়পত্র, কোম্পাণীর নামে টি আই এন, সিগ্নেটরির ছবি, অন্যান্য পার্টনারদের ছবি (যদি লাগে) লাগবে।

▷ ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে টিআইএনের কী সম্পর্ক?

উত্তর : যে সকল একাউন্টে সুদ বা আয় আছে সেসব ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মানুসারে উৎসে আয়কর কর্তন করা হয়। যদি হিসাবধারীর টিআইএন ব্যাংকে জমা দেওয়া হয় তাহলে উৎসে ১০% হারে আয়কর কর্তন করা হয়। নতুবা ১৫% হারে।

▷ ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে কী করতে হবে?

উত্তরঃ ব্যাংক লোন পেতে হলে আপনার বিজনেস এর বয়স হতে হবে মিনিমাম ১-৩ বছর (ব্যাংক ভেদে)। বিজনেস এর ট্রেড লাইসেন্স, পার্টনারশিপ ডিড, টি আই এন, ন্যাশনাল আই ডি, ফটো, লাস্ট ওয়ান ইয়ার এর ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিজনেস ওয়ার্ক অর্ডার, ক্যাশ ইন ফ্লো এবং আউট ফ্লোর স্টেটমেন্ট, যে উদ্দেশ্যে নেয়া হচ্ছে লোন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, এর ব্যবহারিক এরিয়া, লোন এপ্লিকেশন ফর্ম, গ্যারান্টার ইনফোরমেশন ইত্যাদি অবশ্যই লাগবে লোন পেতে হলে ব্যাংক থেকে।