spot_imgspot_img

মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোগ দিবস ২০২১ (MSME Day 2021) উদযাপিত

করোনা মহামারির কালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তে সেক্টরের নাম মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারী। এই খাতের উদ্যোক্তারা সে অর্থে তাদের জন্য বরাদ্ধের প্রণোদণাও সবটুকু পাননি। তারপরও তারা এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী ২৭ জুন পালিত হয়েছে এমএসএমই দিবস ২০২১। গেল বছরের ন্যায় এবছরও ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ –এর উদ্যোগে তিনদিন ব্যাপী উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুনির হাসান ডট কমের সঙ্গে যৌথভাবে এই উদযাপনে একটি কর্মশালা ও দুইটি লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ আলোচনা শুরু হয় ২৬ জুন থেকে।

প্রথম দিনের আলোচনায় আলোচক ছিলেন এসএসএল ওয়্যারলেসের ডিজিটাল কমিউনিকেশন হেড রুহুল আমিন রনি। বিশ্বজুড়ে ব্যবসার নানান কাজে হোয়াটসএপের ব্যবহার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এ প্ল্যাটফর্মকে ব্যবসার কাজে কীভাবে হোয়াটসএপ ব্যবহার করতে পারেন – তিনি এ সম্পর্কে ধারণা দেন। সঞ্চালনা করেন বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

আলোচনায় তিনি বলেন, বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ হোয়াটসএপ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে  যেখানে ফেসবুক ব্যবহার করছে প্রায় ৪ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ যাদের বড় অংশই  হোয়াটসএপ ব্যবহারকারী। আগামীতে এটি আরও বাড়বে। তাই এ সময়ে হোয়াটসএপ যে একটা সম্ভামনাময় যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যবসার কাজে লাগানোর হাতিয়ার তা বলাই বাহুল্য।

তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হোয়াটসএপ গ্রুপের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা সম্পর্কে প্রচারণা চালানো এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার প্রচারণা চালাতে এই জনপ্রিয় মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন। কেউ কেউ সেটি শুরু ও করেছেন। এছাড়া হোয়াটসএপ-এর বিজনেস এপ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা তাদের পন্য সম্পর্কিত তথ্যপ্রদান স্বয়ংক্রিয় করে ফেলতে পারেন। এতে করে গ্রাহকেরা যেমন পন্য সম্পর্কিত তথ্য সহজে পেয়ে যান, তেমনি ব্যবসায়ীদের পক্ষে গ্রাহক সামলানোও সহজ হয়ে ওঠে। এছাড়া কাস্টোমার টার্গেট করে পরবর্তীতে তাদের অফার, কুপন বা বিশেষ আয়োজন সম্পর্কে জানানোও হোয়াটসএপ বিজনেস এপ ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে করে ফেলা যায়।

জুম প্ল্যাটফর্মে আলোচনাটি ২৬ জুন বিকেল ৪টায় অনুস্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় দিন এমএসএমই দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশের নানা প্রান্তের সফল উদ্যোক্তাদের। উদ্যোক্তাদের নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান সরাসরি ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ পেইজ থেকে প্রচারিত হয়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রেনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সানজানা জামান, এমরাজিনা টেকনোলজিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এমরাজিনা ইসলাম, ক্রিয়েটিভ সফট টেকনোলজিসের সিইও নাহিদা জাহান,  টেকনেক্সটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ রেজওয়ানুল হক, ভাইপার লেদারের প্রতিষ্ঠাতা এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বায়েজিদ এবং স্কিল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ডিজিসফট টেকনোলজিসের এর সিইও এম শাহাদত হোসাইন রিয়াদ। সঞ্চালনা করেছেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

অনুষ্ঠানের প্রথমে উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার শুরু এবং কোভিট পরিস্থিতিতে নানান চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

ব্যবসা পরিচালনার নানান কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ রেজওয়ানুল হক বলেন, কর্মীদেরকে কর্মী হিসেবে না দেখে আমরা এক দলের সদস্য হিসেবে কাজ করি। এতে তারা কাজ ভালো করেন।

নাহিদা জামান জানান, একটি টেকনোলজিক্যাল কোম্পানি চালাতে শুধু টেকনিক্যাল স্কিল হলেই চলে না, কর্মীদের চালাতে ম্যানেজমেন্ট স্কিলও থাকতে হয়। কাজ কম থাকলেও অফিসে থাকতে হবে এমন নীতিতে তিনি বিশ্বাসী নন। কাজ না থাকলে কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেন নাহিদা। আবার বেশি কাজ থাকলে সবাই মিলে ১৬-১৭ ঘন্টাও কাজ করেন। কর্মীদের ফ্ল্যাক্সিবিলিটি দেওয়ার কারণেই কর্মীরা কোনো অভিযোগ করেন না বলে তিনি মনে করেন।

এমরাজিনা টেকনোলজিসের বেশির ভাগ কর্মীই মেয়ে। তারা বাসায় বসে কাজ করলেও তাদের কাজ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই সহ-প্রতিষ্ঠাতা এমরাজিনা ইসলামের। তিনি বলেন, বাসায় বসে কাজ করা মেয়েদের জন্যে অনেক চ্যালেঞ্জিং হলেও তারা সবাই সময়মত কাজ করেন। মেয়েদের মাতৃকালীন ছুটির সময়ে কাজ সামলানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ঐ সময়ে কাজ করার জন্যে আমি ব্যাক আপ প্ল্যান রেডি রাখি। যাতে সেসময়ে কাজে কোনো সমস্যা না হয়।

এদিকে রেনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সানজানা জামান জানান, কোভিট পরিস্থিতিতে তিন মাস কারখানা বন্ধ থাকলেও তিনি বেতন দিয়ে গেছেন তার কর্মীদের। তারপর কারখানা খুলে দেবার পরেও যাতে তাদের সুরক্ষিত রাখা যায় সেজন্যে কারখানার পাশেই বাসা নিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতে কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবার পাশাপাশি তাদের কাজের মানও বেড়েছে।

ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক মূলধন কোথা থেকে পেয়েছিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সবাই বলেন নিজের সঞ্চয় বা পারিবারিক সাহায্যের কথা। তবে সানজানা জামান জানালেন, “ব্যবসা শুরু থেকে আমি আমার সব লেনদেনের হিসাব লিখে রাখতাম। কারণ ব্যাংক লোন দেয়ার ক্ষেত্রে ৩ বছরের একটা ট্রানজেকশনের বিবরণী চায়। তাই উদ্যোক্তাদের জন্যে এই তিন বছর ব্যবসায় টিকে থাকা খুব জরুরী”। তাছাড়া এমরাজিনা ইসলাম জানান, উদ্যোক্তাদের জন্যে মানুষের সাথে মেশা, নানা পন্য সম্পর্কে কথা বলা ও নিজের নেটওয়ার্ক বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভবিষ্যতে নিজেরই লাভ হয়।

ফেসবুক লাইভ আলোচনাটি ২৭ জুন রাত ৯ টায় সরাসরি ‘চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব’ এর অফিসিয়াল পেইজ থেকে সম্প্রচারিত হয়।

তিন দিন ব্যাপী এই আয়োজনের শেষ আকর্ষণ ছিল তৃতীয় দিনের ‘করোনাকালে এমএসএমই খাতে ফাইন্যান্সিং’ শীর্ষক লাইভ আলোচনা । এই আলোচনায় বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক এর সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লাইফ ক্যাসেল পার্টনার-এর ফিনান্সিয়াল ইনক্লিউশন অ্যান্ড ইনভেসটমেন্ট ডিরেক্টর শওকত হোসেন, ডব্লিউ পি ডেভেলপার এর প্রতিষ্ঠাতা এম আসিফ রহমান  এবং এফএমপ্লাস্টিক লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ গাজি তৌহিদুর রহমান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালক মুনির হাসান তুলে ধরেন করোনা পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের ব্যাবসায় টানাপড়েনের কথা এবং জানান যে অনেক উদ্যোক্তা সরকারের দেওয়া প্রণোদনা নিতে পারেনি বিভিন্ন জটিলতার কারনে। এই করোনা সময়ে উদ্যোক্তারা কীভাবে বিনিয়োগ পেতে পারে এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল , এঞ্জেল ইনভেস্টর কী দেখে একজন উদ্যোক্তাকে ফান্ড দেয় এসব প্রশ্ন তিনি অতিথিদের করেন।

প্রশ্নের জবাবে  শওকত হোসেন বলেন, ব্যাংক কিংবা বা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রথমে যে জিনিসটি দেখে তা হলো ব্যবসাটি দীর্ঘ মাত্রায় সাস্টেইনেবল কিনা, বৈধ কিনা, অনন্য বিক্রির আইডিয়া, কাগজ পত্র  এবং ওই ব্যবসা খাতের বাজার কত বড় ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের  জন্য যে বিভিন্ন রকম নিয়ম কানুন আছে সেগুলো কতটা মানা হচ্ছে তার ভিত্তিতে মূলত বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা। তিনি আরো বলেন, অবশ্যই উদ্যোক্তাকে তার প্রোডাক্টকে যতটা পারা যায় আকর্ষণীয় করে তুলতে অন্যথায় কেন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করবেন। করোনাকালীন সময়ের মন্দায় এই ব্যাপারগুলোতে আরো জোর দেয়া উচিৎ ।

এফ এম প্লাস্টিক লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ গাজি তৌহিদুর রহমান বলেন, ব্যবসায় বিনিয়োগের পর ব্যাংক আমার ব্যাবসায় লাভ বা লস হচ্ছে কি না টা দেখতে চায় না তবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তা দেখে এবং সব সময় সাপোর্ট দেয়। এটা বেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ব্যবসার ক্ষেত্রে। ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের লোন আছে সেগুলো সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের ধারণা থাকা উচিৎ এবং সে অনুযায়ী লোন নেয়া উচিৎ।

ডব্লিউপিডেভেলপার এর প্রতিষ্ঠাতা এম আসিফ রহমান বলেন ব্যবসা কিছুটা শুরু করে কিছু পথ অতিক্রম করার পর বিনিয়োগ করার চেয়ে ব্যবসার শুরুতে বিনিয়োগ করা বেশ সহজ। তিনি মনে করেন ব্যবসার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এর পেছনে কে আছে সেটা। পরিষ্কার করে বলতে গেলে প্রতিষ্ঠাতা। যদি তার হার না মানার দৃঢ় মানসিকতা থাকে তবেই তিনি বিনিয়োগ করেন।  করোনা কালে অনেক ব্যাবসার অবস্থা বেশ খারাপ হলেও কিন্তু বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে যাচ্ছে ব্যাবসার পেছনের লোকের হার না মানার মানসিকতার কারনে।

ফেসবুক লাইভ আলোচনাটি ২৮ জুন রাত ৯ টায় সরাসরি ‘চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব’ এর অফিসিয়াল পেইজ থেকে সম্প্রচারিত হয়।

 

Get in Touch

spot_imgspot_img

Related Articles

spot_img

Latest Posts