বন্ধু,পরিবার,ভোক্তা এবং পৃথক বিনিয়োগকারীর থেকে ব্যবসার জন্য বা সামাজিক কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার নামই হলো ক্রাউড ফান্ডিং।
এই পদ্ধতি একটি বৃহত জনগোষ্ঠীকে নিদৃষ্ট একটি ব্যবসায়ীক বা সামাজিক উদ্দ্যেশ্যে একত্রি করে রাখে।
প্রাথমিকভাবে অনলাইনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ করে তহবিল সংগ্রহ করার প্লাটফর্ম ও নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক করে বড় কোন ব্যবসায়িক বা সামাজিক কার্যক্রম কে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো এর প্রধান উদ্দেশ্য।
ক্রাউড ফান্ডিং মূলত মূলধারা ব্যবসার বিপরীত পদ্ধতি। মূলধারা ব্যবসা শুরু করতে বা নতুন পন্য বাজারে লঞ্চ করতে গেলে বা বাজার সম্প্রসারণ করতে চাইলে পূঁজি কালেকশন করতে হতে পারে।এই পূঁজি কালেকশন করতে হলে অবশ্যই ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা, বাজার গবেষণা, এবং অন্যান্য বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এরপর ধারনা পত্রটি বা প্লান টি সীমিত এবং ধনী ব্যক্তির কাছে বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে হয়। ব্যাংক,এঞ্জেল ইনভেস্টর, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম সহ কয়েকটি সীমিত প্রতিষ্ঠানের উপরে নির্ভরশীল থাকে তহবিল যোগাড়ের মুল চাবিকাঠি।
এই ফান্ড রাইজিং পদ্ধতি কে একটি ফানেল হিসাবে ভাবলে মুলধারার ব্যবসায়ী ও তার ব্যবসায়ীক প্লানের বক্তব্য হলো ফানেলের চওড়া প্রান্তর আর ইনভেস্টর বা পুঁজি কালেকশন হলো ফানেলের চাপা প্রান্তর। ব্যবসায়ী তার লক্ষ্য সঠিক ইনভেস্টরের বা ফার্মের দিকে সঠিক সময়ে স্থির করতে না পারলে টাকা ও সময় দুই ই নষ্ট হবে।
অন্যদিকে ক্রাউড ফান্ডিং এর মাধ্যমে একটি একক প্লাটফর্ম করে ব্যবসার ফান্ড রাইজিং করতে হলে প্লান,রিসোর্স গুলোকে সাজিয়ে উপস্থাপন করে বিভিন্ন পার্সোনাল নেটওয়ার্ক কে ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগকারীকে খুঁজে নিয়ে ফান্ড রাইজ করা যায়।এর মাধ্যমে সহজেই আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের থেকে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহন করা যায়।
ক্রাউড ফান্ডিং এর উপকারিতা কি?
ব্যাপক সংখ্যক বিনিয়োগকারীকে সহজেই ব্যবসায়ীক তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি নেটওয়ার্ক এ একত্রিত করে রাখা যায়। ট্রেডিশনাল পদ্ধতির ফান্ড কালেকশনের চেয়ে ক্রাউড ফান্ডিং পদ্ধতির বেশ কিছু সুবিধা আছে।
বিনিয়োগকারীদের কে সহজে রিচ করাঃ
ফান্ডেবল একটি ক্রাউড ফান্ডিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে হাজার জন বিনিয়োগকারীর সাথে যোগাযোগের এড্রেস থাকে যার মাধ্যেমে বিনিয়োগকারী অর্থ সংগ্রহের প্রচারণা,ব্যবসার পদ্ধতি দেখতে, সাথে সাথে যোগাযোগ করতে ও বিভিন্ন ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।ফান্ড রাইজিং ও করা যায় দ্রুত।
উপস্থাপনাঃ
ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেইন তৈরী করে একদম উপরের লেভেল থেকে ব্যবসার দিকে নজর দেওয়া যায়। ক্যাম্পেইন পরিচালনাও সহজে করা যায়।
পাব্লিক রিলেশন ও মার্কেটিংঃ
একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সোসাল মিডিয়া, ইমেইল,নিউজ লেটার, এবং অন্যান্য অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে ক্রাউড ফান্ডিং এর প্রচারণা করা ও শেয়ার করা হয়। বিনিয়োগকারীদের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখা লাগে। যোগাযোগ না থাকলেই, প্রচারণা না থাকলেই বিনিয়োগ কারী আগ্রহী দ্রুত হারিয়ে ফেলে।তাই সব সময়েই পাব্লিক রিলেশন ও মার্কেটিং টা বজায়ে রাখতে হয়।
হয়তো ১০০০ জন কে বিজনেস এর প্লান জানাবেন, ৩০০ জন শুনবে মন দিয়ে, ১০০ জন চিন্তা করবে বিনিয়োগের জন্য, ৫০ জন পুরোপুরি খোজখবর নিবে ব্যবসা বা সামাজিক কাজের যে জন্য ফান্ড রাইজ করা হচ্ছে।২০ জন বিনিয়োগকারী পাওয়া যাবে। এভাবে বিভিন্ন ব্যবসা বা সামাজিক কাজে যখন বিনিয়োগকারী বাড়বে তখন আরো বেশি বিনিয়োগকারী দ্রুত পাওয়ার সম্ভাবনা ও তৈরী হবে।
বিজনেস প্লান বা ধারনার ভ্যালিডিটিঃ
একটি ব্যবসায়ীক ধারনা বা ব্যবসা কে জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করে ধারনা প্রস্তাব টি যাচাই এবং পরিমার্জন করার চমৎকার একটি সুযোগ করে দেয় ক্রাউড ফান্ডিং। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ প্রকাশ এবং প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করতে শুরু করে।ধারনা বা ব্যবসায় কোন কিছুর ঘাটতি থাকলে প্রশ্ন ও জিজ্ঞেসার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান হয়ে যায় যা বিনিয়োগকারীদেরকে আরো দ্রুত বিনিয়োগ করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
দক্ষতাঃ
অনলাইন ক্রাউড ফান্ডিং এর সেরা জিনিস গুলোর একটি হলো ফান্ড কালেকশনের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত ও সুদৃঢ় করার ক্ষমতা।
একটি একক ও অসাধারণ বিজনেস ধারনা বা প্রফাইল দিয়ে সমস্ত সম্ভাবনাময় ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ বানানো যায়।ম্যানুয়েলি নথিপত্র, হিসাব করার চেয়ে অনলাইনে সব কিছুই করা যায়।।এরফলে সহজেই ফান্ড কালেকশন করা যায় এবং কালেকশনের জন্য বেশি সময় না দিয়ে ব্যবসায় আরো বেশি সময় দেওয়া যায়।
ক্রাউড ফান্ডিং এর ধরন কি কি?
নানা ধরনের ক্রাউড ফান্ডিং আছে যা নির্ভর করে পন্য বা ব্যবসার ধরন,সার্ভিসের ধরন এবং লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে উপরে।প্রাথমিকভাবে তিন ধরনের ক্রাউড ফান্ডিং আছে।
★ ডোনেশন বেইজড বা দান ভিত্তিক
★ রিওয়ার্ড বেইজড বা পুরস্কার ভিত্তিক
★ ইকুইটি ক্রাউড ফান্ডিং
দান ভিত্তিকঃ
এই পদ্ধতির ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেইনে বিনিয়োগকারী বা যাদের অবদান আছে ফান্ড রাইজিং এ, তাদের কোন আর্থিক রিটার্ন আসেনা। এই তহবিল দান হিসাবে দিয়ে থাকে বিনিয়োগকারী।
প্রচলিত দান ভিত্তিক ক্রাউড ফান্ডিং এর মধ্যে দুর্যোগের ত্রান ও অন্যান্য সহায়তা, দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান, অলাভজনক এবং মেডিকেল বিলের জন্য তহবিল সংগ্রহ অন্তর্ভুক্ত।
পুরস্কার ভিত্তিকঃ
একজন বিনিয়োগকারী ব্যবসা বা সামাজিক কাজে অবদান রাখে পুরস্কারের বিনিমিয়ে যা কোম্পানির প্রডাক্ট বা সার্ভিসের মাধ্যমে সাধারণত অফার দিয়ে থাকে।এটা দান ভিত্তিক ক্রাউড ফান্ডিং এর একটি উপধারা হিসাবেও পরিগনিত হয়।এখানেও কোন সরাসরি আর্থিক লাভ বা ইকুইটি রিটার্ন থাকে না।
ইকুইটি ভিত্তিকঃ
এই ক্রাউড ফান্ডিং বিনিয়োগকারীকে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় অংশিদার করে নেয়।বিনিয়োগকারী তখন ইকুইটি ওনার হিসাবে গন্য হয়।এবং ইকুইটি ওনার হিসাবে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের উপরে আর্থিক রিটার্ন পায় এবং মুনাফা ও লসের অংশিদার হয়।
লেখকঃ তাহির ইবনে মোহাম্মাদ